রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কার্যক্রমের আড়ালে অবৈধ মানবপাচার: সম্প্রতি চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চাঞ্চল্যকর মানবপাচার মামলার নেপথ্যে থাকা নারীপাচার চক্রের মূলহোতাকে লক্ষ্মীপুর সদর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭ এবং র্যাব-১১ এর যৌথ আভিযানিক দল
মিডিয়া সেন্টার ঃ- র্যাব-৭
নারীপাচার চক্রের মূলহোতাকে লক্ষ্মীপুর সদর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭ র্যাব-৭ এর মিডিয়া সুত্রে জানা গেছে,
সাম্প্রতিক সময়ে মানবপাচার চক্রের প্রলোভনে পড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পতিতালয়ে বিক্রি হওয়া একজন নারী ভুক্তভোগী ভিকটিম পালিয়ে আসার পর তার দেয়া লোমহর্ষক বর্ণনায় বেরিয়ে আসে নারীপাচার চক্রের ভয়াবহ সিন্ডিকেটের তথ্য। উক্ত সিন্ডিকেট চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি থেকে শুরু করে যশোর জেলার বেনাপোল পর্যন্ত বিস্তৃত। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সনাক্ত হয় মানব পাচার চক্রের বেশ কিছু দালাল এবং সীমান্ত পারাপার করতে সহায়তাকারী লাইনম্যান । মানবপাচার সংক্রান্তে গত ২৪ জুন ২০২৪ইং ভুক্তভোগী ভিকটিম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ৪ জন এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৩৪, তারিখঃ ২৪ জুন ২০২৪ইং, ধারা-২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ৬(২)/৭/৮/(২)/১১।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গত ২৭ জুন ২০২৪ইং তারিখে উক্ত মামলার এজাহারনামীয় ২নং এবং ৩নং আসামি’কে গ্রেফতার করে থানায় হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামি ঝুমু বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত তার জবানবন্দীতে চাঞ্চল্যকর মানবপাচারের নেপথ্যে থাকা মূলহোতা মোঃ বেল্লাল হোসেন এর উল্লেখ করে।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম মানবপাচার চক্রের মূলহোতা মোঃ বেল্লাল হোসেন’কে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে। নজরদারির একপর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, মোঃ বেল্লাল হোসেন লক্ষ্মীপুর জেলার লক্ষ্মীপুর সদর থানাধীন সানকিভাঙ্গা এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭ এবং র্যাব-১১ এর যৌথ আভিযানিক দল গত ০২ জুলাই ২০২৪ইং তারিখে আনুমানিক ০৪০০ ঘটিকায় বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মানবপাচার চক্রের মূলহোতা আসামি মোঃ বেল্লাল হোসেন(৩৪), পিতাঃ নুরুল আমিন, সাং-লেনুয়া, থানা-মানিকছড়ি, জেলা-খাগড়াছড়ি’কে আটক করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতার করার পর উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে উপরোক্ত নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে এবং নারীপাচার চক্রের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, সে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এর উপস্থাপক এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নাচ-গানের সাথে সম্পৃক্ত। নাচ-গানের সুবাদে বিভিন্ন আঞ্চলিক নৃত্য শিল্পীদের সাথে তার পরিচয় হয়। এছাড়াও গার্মেন্টসে কর্মরত বিভিন্ন মেয়েদের নৃত্য দলে নেয়ার কথা বলে তাদের সাথে সে সখ্যতা গড়ে তোলে। সখ্যতার সুযোগে নারীদের পার্শ্ববর্তী দেশের বিউটি পার্লার এবং বিভিন্ন গার্মেন্টসে উচ্চ বেতনে চাকরি প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে সে তাদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে তাদের’কে পাসপোর্ট ব্যতীত অবৈধভাবে সীমান্ত পার করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে নিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়। উল্লেখ্য যে, গত ২৭ জুন ২০২৪ইং সূত্রে বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় দুজন নারী আসামিকে গ্রেপ্তারের পর থেকে মোঃ বেল্লাল হোসেন আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায় এবং যশোর জেলার সীমান্ত এলাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে সর্বশেষ লক্ষ্মীপুর জেলার লক্ষ্মীপুর সদর থানাধীন সানকিভাঙ্গা এলাকায় অবস্থান করছিল।
গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তাকে চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।